তথ্য ও প্রযুক্তি, আশীর্বাদ না অভিশাপ?
এম এন টিপু : সমপ্রতি জাপানে তথ্য ও প্রযুক্তির প্রতিফলন ঘটিয়ে বিষ্ময়কর এক ঘটনা ঘটিয়েছে ১৯ বছরের এক ছাত্র। জাপানে আগামী এপ্রিল মাসে শুরু হতে যাচ্ছে নতুন শিক্ষা বর্ষ। শুরু হতে যাচ্ছে ভর্ত্তি প্রতিযোগিতার পালা। সদ্য কলেজ লেভেল পাশ করে ছাত্রছাত্রীরা কে কোন উন্নত থেকে উন্নততর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্ত্তি হতে পারে, তার প্রতিযোগিতায় উঠেপরে লেগেছে উচ্চাভিলাসী ছাত্রছাত্রীরা।
জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থা অন্যান্য পশ্চিমা দেশ গুলোর মত। স্কুল বলতে ১২তম ক্লাশ পর্যন্ত বোঝায়, যা হলো প্রাথমিক ৬বছর এবং নিম্ন মাধ্যমিক তিন বছর উচ্চ মাধ্যমিক তিন বছর।এ বার (১২) বছর শিক্ষা জীবন শেষ করলে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভত্তির পালা। চার বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করলে গ্র্যাজুয়েট ধরা হয়। মাষ্টার্স এর জন্য আরও ২ বছর পড়াশোনা করলে তখন মাষ্টার্স ধরা হয়। এ হলো একাডেমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মোটামুটি হিসেব।
অন্যান্য উন্নত দেশ গুলোর মত ১২তম ক্লাশ পাশ করলেই প্রাথমিক যোগ্যতা শেষ হয়ে যায়। এবং কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অধ্যয়ন করে ৫০শতকরা ছাত্রছাত্রী। জাপানীজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে পরিচালিত।
সাড়া বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর র্যাংক হিসেবে সেরা বিশ্ববিদ্যালয় তালিকাভূক্ত, যার মধ্যে টোকিও ইউনিভারসিটি, ওয়াছেদা ইউনিভারসিটি, কিয়োতো ইউনিভার্সিটি, মেইজি ইউনিভার্সিটি।
২০১১ এর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্ত্তি পরীক্ষা নিয়ে ঘটেগেল তথ্য ও প্রযুক্তির এক অভিনব প্রয়োগ। ভর্তি পরীক্ষা চলছে কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি পরীক্ষার ১১ মিনিটের মাথায় প্রশ্নপত্রের কপি নেটের মাধ্যমে চলে গেল ইয়াহু চিয়েবুকুরো নামক সাইটে, যে সাইটটি সরাসরি সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে থাকে সাইট ব্যবহার কারীদের।
এ সাইটটি একটি অলাভ জনক সাহায্যকারী সাইট গ্রাহকরাই প্রশ্নকর্তা এবং গ্রাহকরাই উত্তরদাতা। তাই ভর্ত্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী ছাত্রটি এ সুযোগ এর স্বদব্যবহার করে তার দক্ষতার বলে। একই ভাবে জাপানের চারটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়রে ভর্ত্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নেট এর মাধ্যমে আউট হয়ে নেটের মাধ্যমে উত্তর মেলে।
পরীক্ষা চলা কলীন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে ঘটনা। শুরু হয় তদন্ত। তদন্তে জানা যায় ১৯ বছর বয়সী এক ভর্ত্তিচ্ছু ছাত্র এ ঘটনার মূল নায়ক। পুলিশ বিভিন্ন অনুসন্ধান চালিয়ে সন্দেহভাজন ছাত্রটিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে স্বীকারোক্তিতে ছেলেটি জানায় যে সে যেন তার বিধবা মায়ের উপর বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়, সে জন্য যে কোন প্রকারেই মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্ত্তি হওয়ার জন্য তার ঐ প্রচেষ্টা। সে আরও জানায় হোষ্টেলে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য মায়ের কাছে মাসে মাত্র ৫০ হাজার ইয়েন নিত। লেখা পড়ার বাদবাকী খরচ সে পার্টটাইম কাজ করে যোগাড় করত। ছেলেটিকে নিয়ে প্রশাসনও একধরনের বিপাকে পড়েছে।
একদিকে জাপানের মত দেশের চারটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ প্রশাসন অপরদিকে উচ্চাভিলাসী এই শিক্ষাথর্ী, তাই পুলিশ আপাতত: তাকে পারিবারিক আদালতে প্রেরণ করেছে।
আসছে
জিন থেরাপির
যুগ
দশক
দুই তিন ধরে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এসেছে এক অভূতপূর্ব সাফল্য। অনেক জটিল থেকে
জটিলতর রোগব্যাধি বিজ্ঞানের সাফল্যের কারণে পরিণত হয়েছে সাধারণ প্রদাহে।
বসন্ত, ডায়রিয়া, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগ আজ আর অতি সহজেই মানুষের মৃত্যুর কারণ
হতে পারে না। টাইফয়েড, জন্ডিসের মতো মারাত্মক রোগও সঠিক সময়ে সঠিক
চিকিৎসায় সেরের যাচ্ছে অতি দ্রুত। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসাও আর আওতার বাইরে বা
ব্যয়বহুল নয়। আজকাল চিকিৎসা হচ্ছে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগেরও। আবিষ্কৃত
হয়েছে এইডস ভ্যাক্সিন যা শুধু এখন সফল ও সঠিক প্রয়োগের অপেক্ষায়। এসব
উত্তরণের ধারাবাহিকতায় চিকিৎসা বিজ্ঞানে মিউজিক থেরাপি, ফিজিওথেরাপির মতো
নবতম সংযোজন জিন থেরাপি।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে সম্ভাবনাময় জিন থেরাপির প্রাথমিক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে অপ্রত্যাশিত কিছু অদৃশ্য জটিলতার, তবে নতুন অত্যাধুনিক এবং সূক্ষ্ম প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়ায় হয়তো এ বৈরিতা উবে যাবে। ঠিক বছরখানেক আগে জিন থেরাপি অর্থাৎ জেনেটিক থেরাপি (রোগীর কোষে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জেনেটিক কোড বা জেনেটিক সঙ্কেত প্রেরণ করে যে চিকিৎসা) আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন বার্তাবাহক বলে চিহ্নিত হয়েছে। পরবর্তীতে এটি স্থবিরও হয়ে পড়েছিল বেশ। গত বছরে যখন বায়োটেকনোলজি ও ওষুধ কোম্পানিগুলো একজন রোগীর অসুখ সারাতে ব্যর্থ হয় তখন অষ্টম ধাপে আসে জিন থেরাপির প্রয়োগ। অর্থাৎ একটি চাহিদা থেকে জিন থেরাপির প্রয়োগ শুরু হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ এর এক উচ্চতর বিশ্লেষণমূলক রিপোর্টে রিভিউ প্যানেল পরিপূর্ণভাবে সব প্রাকৃতিক প্রতিরোধ শক্তির অবস্থান না জেনে জেনেটিক মেডিসিন ব্যবহারে কিছুটা অসন্তোষও প্রকাশ করেছে। কারণ হিসেবে তারা বলেছে জেনেটিক মেডিসিন প্রয়োগ, পরিহারসহ দেহের এ মেডিসিন গ্রহণ করার ক্ষমতা না জেনে ব্যবহার ঠিক নয়। কিছুটা সংশোধন ও পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে আবার জিন বিশেষজ্ঞরা তাদের ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ করেন এবং তারা কিসের বিরুদ্ধে কীভাবে কাজ করছেন তার উন্নতি সাধন করলেন। অনেক গবেষকই মনে করলেন তাদের মেডিসিনের বর্তমান সঙ্কট দীর্ঘমেয়াদি এবং বড় সাফল্যের ইঙ্গিতবাহী। তারা আশাবাদ ব্যক্তও করেছেন এর সাফল্যের ব্যাপারে। ল্যাবরেটরিতে এবং ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে তারা বলেছেন এ গবেষণার ব্যয় সংকোচন করলেও অচিরেই জিন থেরাপি সফলভাবে ফিরে আসছে।
জেনেটিক মেডিসিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো এ ব্যাপারে অনুৎসাহ। প্রথমে গবেষকরা চান ইতিবাচক ফলাফলের জন্য কোনোভাবে পর্যাপ্ত কোষে জেনেটিক ওষুধ প্রয়োগ করতে। এ জন্য রেট্রোভারিসগুলোকে মনে করা হয় উপযুক্ত। কারণ যড়ংঃ ঈবষষ-এর জেনেটিক কোডের মধ্যে তাদের ডিএনএর কিছু অংশ উৎপন্ন করে এ ভাইরাসগুলোকে সংক্রমিত করে। ইদানীং গৃহীত জেনেটিক মেডিসিন ট্রায়ালে রেট্রোভাইরাসকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এ রেট্রোভাইরাসের ক্ষতিকর অংশের জিন স্থাপনের মাধ্যমে সিস্টিক ফাইব্রোসিস এবং মস্তিষ্ক ক্যান্সারের মতো ধ্বংসাত্মক রোগের চিকিৎসা সম্ভব হবে।
কিন্তু ভাইরাল ড্রাগ তখনই ফলপ্রসূ হবে যখন তারা মানুষের বহুস্তর বিশিষ্ট প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে (ঐঁসধহ রসসঁহব ংুংঃবস) অতিক্রম করতে পারবে।
জিন প্রযুক্তিতে শক্তিশালী অ্যান্টিবডির আগমন ঘটে এবং পরবর্তীতে খুব তাড়াতাড়ি দেহাভ্যন্তরের কোনো ভাইরাস রক্ত প্রবাহে সঙ্কেত প্রদান করে। এই অ্যান্টিবডিগুলো দ্রুততার সঙ্গে ভাইরাসটিকে আটকে ফেলে এবং এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। এ ভাইরাল পার্টিকেল (অনু) গুলোকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পেঁৗছতে দ্বিতীয় আরেকটি প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করতে হয়। আর তা হলো একটি মেমব্রেন (ঝিলি্ল) যা কোষের ডিএনএকে আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। চূড়ান্তভাবে কেবল সৌভাগ্যবশত হয়তো কিছু রেট্রোভাইরাস দেহের কোষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতিক্রম করে কোষকে সংক্রমিত করে। এগুলো কোষের ডিএনএতে অবস্থান নিয়ে প্রতিনিয়ত থেরাপিউটিক জিনকে আরোগ্যকারী জিন সনি্নবেশিত করবে। এ নতুন জিন প্রকৃতপক্ষে কোষের ক্ষতি করে একটি বিশেষ ধারাবাহিকতা ব্যাহত কের। এ জিন রোগীর অবস্থার বিশেষ পার্থক্য সৃষ্টির জন্য যেখানে সহজে সরাসরি ভূমিকা পালন করতে পারে না সেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডিএনএর সুপ্ত বিস্তার প্রক্রিয়া রোধ করে।
যদিও জিন বিশেষজ্ঞরা এ প্রতিবন্ধকার জন্য কিছুটা বিব্রত কিন্তু তারা এটি বাদ দিয়ে দেননি। জিন থেরাপি সম্পর্কে নতুন উদ্যম উৎসাহ অব্যাহত রয়েছে। এর জন্য গ্রহণ করাও হয়েছে নতুন কৌশল। জচউ এবহপবষষ (ফ্রান্সের রোন পুল্যাঙ্ক কোম্পানির তত্ত্বাবধানে চালিত জিন থেরাপি নেটওয়ার্ক) ঘধঃঁৎব গবফরপরহব-এ তাদের ফুসফুসের ক্যান্সারে প্রয়োগ করা রেট্রোভাইরাস জিন থেরাপির পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ করেছে। এতে তারা ঢ়৫৩ নামক জেনেটিক মেডিসিন ইনজেকট করেছে (চ৫৩-টিউমার দমনকারী জিন) সরাসরি ৯ জন রোগীর টিউমারে। এই পদ্ধতিতে সাধারণ ইমিউন সিস্টেম বা প্রতিরোধ পদ্ধতিকে ট্রেগারিং করে উপেক্ষা করা হয়েছে এবং টিউমার সেল যাতে বিভক্ত না হতে পারে তার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলে তিনজন রোগীর টিউমার লক্ষ্য করার মতো সংকুচিত হয়ে যায়। অন্য তিনজনের ক্ষেত্রে টিউমার বাড়তে পারেনি, যদিও ৯ জন রোগীর সবাই মৃত্যু বরণ করেছে।
যদি ভাইরাস এবং তাদের বহু প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করা যায় তাহলে জিন থেরাপির প্রকৃতি নির্ণয় সম্ভব হবে বলে অন্য দুটো গ্রুপের প্রাপ্ত সাম্প্রতিক ফলাফলে দেখা গেছে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এবং সানডিয়েগোর একটি বায়োটেকনিক্যাল ফার্ম ইরিথ্রোপোয়েটিন নামক এক ধরনের গ্রন্থি রসের জন্য প্লাজমিড নামের একটি চলমান ডিএনএ প্যাকেজে জিন প্রয়োগ করে। এ ইরিথ্রোপোয়েটিন হচ্ছে এক প্রকার হরমোন যা রক্তের প্লাজমায় লোহিত কণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে। অন্য একটি বায়োটেকনোলজি কোম্পানি অসমবহ, প্রতিবছর অ্যানিমিয়া এবং অন্যান্য রক্তঘটিত রোগাক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের সিনথেটিক ইরিথ্রোপোয়েটিন তৈরি করে বিক্রি করছে।
ঞযব চৎড়পববফরহমং ড়ভ ঘধঃরড়হধষ অপধফবসু ড়ভ ঝপরবহপব এ প্রকাশিত এক আর্টিকেলে শিকাগোর গ্রুপটি রিপোর্ট করে যে, সাধারণ একটি ইঁদুরের পশ্চাদ্দেশে উন্মুক্ত ডিএনএ ইনজেকট করার ৯০ দিন পরে তারা ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছেন এবং এতে দৃঢ়ভাবে তারা প্রত্যক্ষ করেছেন যে, জিন কোষে অবস্থান করছে এবং হরমোন উৎপাদন করা শুরু করেছে।
শিকাগো ইউনিভার্সিটির ডাইরেক্টর অব দি স্টাডি জেফরি এম লিডেন বলেন যে, তাদের গবেষণা প্রমাণ করে ইনট্রামাসকুলার ইনজেকশন বা হেমোফিলিয়া এবং ডায়াবেটিসের বিভিন্ন রকম ঝচউউ (ঝবৎঁস চৎড়ঃবরহ উবভরপরবহপু উরংবধংবং) রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে সম্ভাবনাময় জিন থেরাপির প্রাথমিক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে অপ্রত্যাশিত কিছু অদৃশ্য জটিলতার, তবে নতুন অত্যাধুনিক এবং সূক্ষ্ম প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়ায় হয়তো এ বৈরিতা উবে যাবে। ঠিক বছরখানেক আগে জিন থেরাপি অর্থাৎ জেনেটিক থেরাপি (রোগীর কোষে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জেনেটিক কোড বা জেনেটিক সঙ্কেত প্রেরণ করে যে চিকিৎসা) আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন বার্তাবাহক বলে চিহ্নিত হয়েছে। পরবর্তীতে এটি স্থবিরও হয়ে পড়েছিল বেশ। গত বছরে যখন বায়োটেকনোলজি ও ওষুধ কোম্পানিগুলো একজন রোগীর অসুখ সারাতে ব্যর্থ হয় তখন অষ্টম ধাপে আসে জিন থেরাপির প্রয়োগ। অর্থাৎ একটি চাহিদা থেকে জিন থেরাপির প্রয়োগ শুরু হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ এর এক উচ্চতর বিশ্লেষণমূলক রিপোর্টে রিভিউ প্যানেল পরিপূর্ণভাবে সব প্রাকৃতিক প্রতিরোধ শক্তির অবস্থান না জেনে জেনেটিক মেডিসিন ব্যবহারে কিছুটা অসন্তোষও প্রকাশ করেছে। কারণ হিসেবে তারা বলেছে জেনেটিক মেডিসিন প্রয়োগ, পরিহারসহ দেহের এ মেডিসিন গ্রহণ করার ক্ষমতা না জেনে ব্যবহার ঠিক নয়। কিছুটা সংশোধন ও পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে আবার জিন বিশেষজ্ঞরা তাদের ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ করেন এবং তারা কিসের বিরুদ্ধে কীভাবে কাজ করছেন তার উন্নতি সাধন করলেন। অনেক গবেষকই মনে করলেন তাদের মেডিসিনের বর্তমান সঙ্কট দীর্ঘমেয়াদি এবং বড় সাফল্যের ইঙ্গিতবাহী। তারা আশাবাদ ব্যক্তও করেছেন এর সাফল্যের ব্যাপারে। ল্যাবরেটরিতে এবং ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে তারা বলেছেন এ গবেষণার ব্যয় সংকোচন করলেও অচিরেই জিন থেরাপি সফলভাবে ফিরে আসছে।
জেনেটিক মেডিসিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো এ ব্যাপারে অনুৎসাহ। প্রথমে গবেষকরা চান ইতিবাচক ফলাফলের জন্য কোনোভাবে পর্যাপ্ত কোষে জেনেটিক ওষুধ প্রয়োগ করতে। এ জন্য রেট্রোভারিসগুলোকে মনে করা হয় উপযুক্ত। কারণ যড়ংঃ ঈবষষ-এর জেনেটিক কোডের মধ্যে তাদের ডিএনএর কিছু অংশ উৎপন্ন করে এ ভাইরাসগুলোকে সংক্রমিত করে। ইদানীং গৃহীত জেনেটিক মেডিসিন ট্রায়ালে রেট্রোভাইরাসকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এ রেট্রোভাইরাসের ক্ষতিকর অংশের জিন স্থাপনের মাধ্যমে সিস্টিক ফাইব্রোসিস এবং মস্তিষ্ক ক্যান্সারের মতো ধ্বংসাত্মক রোগের চিকিৎসা সম্ভব হবে।
কিন্তু ভাইরাল ড্রাগ তখনই ফলপ্রসূ হবে যখন তারা মানুষের বহুস্তর বিশিষ্ট প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে (ঐঁসধহ রসসঁহব ংুংঃবস) অতিক্রম করতে পারবে।
জিন প্রযুক্তিতে শক্তিশালী অ্যান্টিবডির আগমন ঘটে এবং পরবর্তীতে খুব তাড়াতাড়ি দেহাভ্যন্তরের কোনো ভাইরাস রক্ত প্রবাহে সঙ্কেত প্রদান করে। এই অ্যান্টিবডিগুলো দ্রুততার সঙ্গে ভাইরাসটিকে আটকে ফেলে এবং এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। এ ভাইরাল পার্টিকেল (অনু) গুলোকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পেঁৗছতে দ্বিতীয় আরেকটি প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করতে হয়। আর তা হলো একটি মেমব্রেন (ঝিলি্ল) যা কোষের ডিএনএকে আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। চূড়ান্তভাবে কেবল সৌভাগ্যবশত হয়তো কিছু রেট্রোভাইরাস দেহের কোষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতিক্রম করে কোষকে সংক্রমিত করে। এগুলো কোষের ডিএনএতে অবস্থান নিয়ে প্রতিনিয়ত থেরাপিউটিক জিনকে আরোগ্যকারী জিন সনি্নবেশিত করবে। এ নতুন জিন প্রকৃতপক্ষে কোষের ক্ষতি করে একটি বিশেষ ধারাবাহিকতা ব্যাহত কের। এ জিন রোগীর অবস্থার বিশেষ পার্থক্য সৃষ্টির জন্য যেখানে সহজে সরাসরি ভূমিকা পালন করতে পারে না সেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডিএনএর সুপ্ত বিস্তার প্রক্রিয়া রোধ করে।
যদিও জিন বিশেষজ্ঞরা এ প্রতিবন্ধকার জন্য কিছুটা বিব্রত কিন্তু তারা এটি বাদ দিয়ে দেননি। জিন থেরাপি সম্পর্কে নতুন উদ্যম উৎসাহ অব্যাহত রয়েছে। এর জন্য গ্রহণ করাও হয়েছে নতুন কৌশল। জচউ এবহপবষষ (ফ্রান্সের রোন পুল্যাঙ্ক কোম্পানির তত্ত্বাবধানে চালিত জিন থেরাপি নেটওয়ার্ক) ঘধঃঁৎব গবফরপরহব-এ তাদের ফুসফুসের ক্যান্সারে প্রয়োগ করা রেট্রোভাইরাস জিন থেরাপির পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ করেছে। এতে তারা ঢ়৫৩ নামক জেনেটিক মেডিসিন ইনজেকট করেছে (চ৫৩-টিউমার দমনকারী জিন) সরাসরি ৯ জন রোগীর টিউমারে। এই পদ্ধতিতে সাধারণ ইমিউন সিস্টেম বা প্রতিরোধ পদ্ধতিকে ট্রেগারিং করে উপেক্ষা করা হয়েছে এবং টিউমার সেল যাতে বিভক্ত না হতে পারে তার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলে তিনজন রোগীর টিউমার লক্ষ্য করার মতো সংকুচিত হয়ে যায়। অন্য তিনজনের ক্ষেত্রে টিউমার বাড়তে পারেনি, যদিও ৯ জন রোগীর সবাই মৃত্যু বরণ করেছে।
যদি ভাইরাস এবং তাদের বহু প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করা যায় তাহলে জিন থেরাপির প্রকৃতি নির্ণয় সম্ভব হবে বলে অন্য দুটো গ্রুপের প্রাপ্ত সাম্প্রতিক ফলাফলে দেখা গেছে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এবং সানডিয়েগোর একটি বায়োটেকনিক্যাল ফার্ম ইরিথ্রোপোয়েটিন নামক এক ধরনের গ্রন্থি রসের জন্য প্লাজমিড নামের একটি চলমান ডিএনএ প্যাকেজে জিন প্রয়োগ করে। এ ইরিথ্রোপোয়েটিন হচ্ছে এক প্রকার হরমোন যা রক্তের প্লাজমায় লোহিত কণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে। অন্য একটি বায়োটেকনোলজি কোম্পানি অসমবহ, প্রতিবছর অ্যানিমিয়া এবং অন্যান্য রক্তঘটিত রোগাক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের সিনথেটিক ইরিথ্রোপোয়েটিন তৈরি করে বিক্রি করছে।
ঞযব চৎড়পববফরহমং ড়ভ ঘধঃরড়হধষ অপধফবসু ড়ভ ঝপরবহপব এ প্রকাশিত এক আর্টিকেলে শিকাগোর গ্রুপটি রিপোর্ট করে যে, সাধারণ একটি ইঁদুরের পশ্চাদ্দেশে উন্মুক্ত ডিএনএ ইনজেকট করার ৯০ দিন পরে তারা ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছেন এবং এতে দৃঢ়ভাবে তারা প্রত্যক্ষ করেছেন যে, জিন কোষে অবস্থান করছে এবং হরমোন উৎপাদন করা শুরু করেছে।
শিকাগো ইউনিভার্সিটির ডাইরেক্টর অব দি স্টাডি জেফরি এম লিডেন বলেন যে, তাদের গবেষণা প্রমাণ করে ইনট্রামাসকুলার ইনজেকশন বা হেমোফিলিয়া এবং ডায়াবেটিসের বিভিন্ন রকম ঝচউউ (ঝবৎঁস চৎড়ঃবরহ উবভরপরবহপু উরংবধংবং) রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতে পারে।
তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :
- বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার চালূ হয়?
- বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার সবার জন্য উন্মুক্ত করে?
- বাংলাদেশে কবে , কোথায় সাইবার ক্যাফে চালু হয়?
- বাংলাদেশে আইটি ভিলেজ কোথায় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহন করেছে?
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম খরচে ফোন করার প্রযুক্তির নাম কি?
- বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ফোন কোম্পানীর নাম কি?
- বিশ্বের প্রথম ডাক টিকেট চালু হয় কোথায়?
- ভারতবর্ষে কখন ডাক টিকেট চালু হয়?
- বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ডাক টিকেট চালু হয়?
- বাংলাদেশের মোট ডাকঘরের সংখ্যা কতটি?
- বাংলাদেশে ই-পোস্ট সার্ভিস কবে চালূ হয়?
- বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন কুরিয়ার সার্ভিসের নাম কি?
- বাংলাদেশে কবে প্রথম ডিজিটাল টেলিফোন ব্যবস্থা চালূ হয়?
- বাংলাদেশে কখন থেকে কার্ড ফোন চালূ হয়?
- দেশে মোট কয়টি মোবাইল ফোন কোম্পানী সার্ভিস প্রদান করছে?
- ‘বিটিআরসি’ কি?
- দেশে মাল্টিমিটারিং সিস্টেম চালু হয় কবে?
- বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্র গুলো কোথায় অবস্থিত?
- বাংলাদেশ বেতার থেকে কোন কোন ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়?
- বাংলদেশ বেতারের সদর দপ্তর কোথায়?
- স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র কোথায় স্থাপিত হয়েছেল?
- রেডিও পাকিস্তানের নাম কবে ঢাকা বেতার কেন্দ্র রাখা হয়?
- জাতীয় সংসদে কবে বেতার-টিভির স্বায়ত্বশাসন বিল পাস হয়?
- বেসরকারী রেডিও স্টেশনের নাম কি?
- বর্তমানে কয়টি বেসরকারী এফএম রেডিও স্টেশন চালু আছে?
- কবে প্রথম বাংলাদেশে টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়?
- কবে বাংলাদেশে রঙিন টেলিভিশন চালু হয়?
- ঢাকার রামপুরায় কবে টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়?
- বাংলাদেশ টেলিভিশনের পূর্নাঙ্গ কেন্দ্র কতটি?
- চট্টগ্রাম পূর্নাঙ্গ টেলিভিশন কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়?
- বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপকেন্দ্র কয়টি?
- বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম নাটক কোনটি?
- বাংলাদেশে টেলিভিশনের প্রথম সংগীত শিল্পী কে?
- বাংলাদেশে টেলিভিশনের প্রথম অনুষ্ঠান কি?
- বাংলাদেশে টেলিভিশনের প্রথম সংবাদ পাঠক কে?
- বাংলাদেশে টেলিভিশনের প্রথম ইংরেজি সংবাদ পাঠক কে?
- বাংলাদেশে টেলিভিশনের প্রথম অনুষ্ঠান পরিচালক কে?
- বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম টিভি সিরিয়ালের নাম কি?
- বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্যাকেজ অনুষ্ঠান গুহীত হয়?
- দেশের প্রথম বেসরকারী টেলিভিশনের নাম কি?
- একুশে টেলিভিশন চালু হয়?
- একুশে টেলিভিশন বন্ধ হয়ে যায়?
- একুশে টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে ছিলেন?
- বাংলাদেশ টেলিভিশন কবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্যাটেলাইট সমপ্রচার শুরু করে?
- বাংলাদেশে কখন থেকে ডিশ এন্টেনা ব্যবহারের সরকারী সিদ্ধান্ত হয়?
- বাংলাদেশে ভু-উপগ্রহ কেন্দ্র কয়টি?
- বেতবুনিয়া কোন জেলায় অবস্থিত?
- তালিবাবাদ কোন জেলায় অবস্থিত?
- বাংলাদেশে কতটি আবহাওয়া কেন্দ্র আছে?
- বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল পত্রিকার নাম কি?
- বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন সংবাদ সংস্থার নাম কি?
- জাতীয় সংবাদ সংস্থার নাম কি?
- বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার আর্বিভাব ঘটে?
- উঃ ১৯৯৩ সালে।
- উঃ ১৯৯৬ সালে।
- উঃ ১৯৯৯ সালে, বনানীতে।
- উঃ গাজিপুরের কালিয়াকৈরে।
- উঃ ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল বা ভিওআইপি।
- উঃ সিটিসেল ডিজিটাল, ১৯৯৩ সাল।
- উঃ ব্রিটেনে।
- উঃ ১৮৭৫ সালে।
- উঃ ২০ জুলাই, ১৯৭১ সালে।
- উঃ ৯৮৬০ টি।
- উঃ ১৬ আগষ্ট, ২০০০।
- উঃ ইজি-পোস্ট।
- উঃ ৪ জানুয়ারী, ১৯৯০।
- উঃ ১৯৯২ সালে।
- উঃ ৬ টি।
- উঃ বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলারেটরী কমিশন।
- উঃ ৩০ জুন, ২০০২।
- উঃ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বগুড়া, রংপুর, কুমিল্লা, রাঙ্হামাটি, ঠাকুরগাঁও, বরিশাল, যশোর ও কক্সবাজার।
- উঃ বাংলা, ইংরেজি, র্উদু, হিন্দী, আরবী ও নেপালী।
- উঃ ঢাকার আগারগাঁওয়ে।
- উঃ চট্টগ্রামের কালুরঘাটে।
- উঃ ৪ মার্চ, ১৯৭১।
- উঃ ১২ জুলাই, ২০০১।
- উঃ রেডিও মেট্রোওয়েভ।
- উঃ ৩টি (রেডিও টুডে, রেডিও ফুর্তি ও রেডিও আমার)
- উঃ ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৬৪ সালে।
- উঃ ১ ডিসেম্বর, ১৯৮০।
- উঃ ১৯৭৫ সালে।
- উঃ ২ টি।
- উঃ ১৯ ডিসেম্বর, ১৯৯৬ সালে।
- উঃ ১৪ টি।
- উঃ একতলা দোতলা, ফ্রেব্রুয়ারী, ১৯৬৫।
- উঃ ফেরদৌসী রহমান।
- উঃ ৫০ মিনিটের ইংরেজি সিনেমা।
- উঃ হুমায়ুন চৌধুরী।
- উঃ আলম রশীদ।
- উঃ কলিম শরাফী।
- উঃ ত্রিরত্ন, ১৯৬৬।
- উঃ ১৯৯৪ সালে।
- উঃ একুশে টেলিভিশন।
- উঃ ৮ মার্চ, ১৯৯৮।
- উঃ ২৯ আগষ্ট, ২০০২।
- উঃ সাইমন ড্রিং।
- উঃ ১১ এপ্রিল, ২০০৪।
- উঃ ২৭ এপ্রিল, ১৯৯২।
- উঃ ৪ টি। বেতবুনিয়া, তালিবাবাদ, মহাখালী ও সিলেট।
- উঃ রাঙ্গামাটি।
- উঃ গাজিপুর।
- উঃ ৩ টি।
- উঃ আইটি.কম।
- উঃ বিডিনিউজ২৪.কম
- উঃ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)।
- উঃ ১৯৭২ সালে।
কনভারজেন্স : যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র
নিজের ভাব ও অভিব্যক্তির প্রকাশ করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। ভাব বিনিময়ের জন্য মানবসভ্যতার জন্মলগ্ন থেকে পারস্পরিক যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র, রাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মানুষের পদচারণা বাড়ার সাথে সাথে ভাব ও তথ্য বিনিময়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দ্রুত বাড়তে থাকে। বর্তমান বিশ্বে তথ্য ও ভাব বিনিময়ের উল্লেখযোগ্য মাধ্যমগুলোর মধ্যে টেলিযোগাযোগ হচ্ছে অন্যতম প্রধান। আমরা কমবেশি সবাই তথ্যপ্রযুক্তি শব্দটির সাথে পরিচিত। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে জীবনের প্রয়োজনে নানা তথ্য, উপাত্ত, প্রযুক্তি ইত্যাদি উদ্ভাবিত হয়েছে এবং মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশে ভূমিকা রেখে চলেছে। মনের ভাব ও তথ্য বিনিময় জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা ও প্রসারের একমাত্র হাতিয়ার। মানুষ প্রতিদিনের জীবনে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা লাভ করে, তা অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়া ছাড়া সভ্যতার বর্তমান স্তরে কখনোই পৌঁছানো সম্ভব হতো না। আমরা কবুতরের মাধ্যমে চিঠি দেয়া-নেয়ার ইতিহাস জানি। এরপর চালু হয়েছে ডাকব্যবস্থা। এভাবে একের পর এক বেতার যন্ত্র, টেলিপ্রিন্টার, টেলিফোন, টেলিভিশন, কমপিউটার, মোবাইল ফোনসহ নানা যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। এসব উদ্ভাবন তথ্য, শব্দ ও ছবি বিনিময়ের বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তি জ্ঞানবিজ্ঞানের উন্নতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এক কথায় তাকে তথ্যপ্রযুক্তি বা ইনফরমেশন টেকনোলজি বলা যেতে পারে।
নতুন তত্ত্ব কনভারজেন্স
তথ্য বা জ্ঞান বিনিময়ের প্রক্রিয়া বা প্রবাহের প্রযুক্তি বা পদ্ধতিকে কমিউনিকেশন টেকনোলজি বা যোগাযোগপ্রযুক্তি বলা হয়। সেজন্যই তথ্য এবং যোগাযোগ এ দুয়ের সমন্বয়ে আইসিটি শব্দটির উৎপত্তি এবং বর্তমানে একটি বহুল পরিচিত পদবাচ্য। আইসিটি হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ ও টেলিযোগাযোগ- এ দুটি শক্তিশালী প্রযুক্তির সমন্বিত প্রকাশ। আমরা জানি, এ যাবত তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যম রেডিও, টেলিফোন, টেলিভিশন বা হাল আমলের মোবাইল ফোন প্রযুক্তির এক-একটি আলাদা আলাদা ক্ষেত্র। তথ্য, কথা এবং ছবি বিনিময়ের জন্য এসব যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। এতে জ্ঞানবিজ্ঞান, ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রসারে বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখলেও একবিংশ শতাব্দীর সভ্যতা তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে রাজি নয়। তাই মানুষ অনুভব করে তথ্য, কথা এবং ছবি একযোগে একই সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় একই ডিভাইসের মাধ্যমে বিনিময় এবং সঞ্চালন করার কথা। ইন্টারনেটপ্রযুক্তির উদ্ভাবন এ ধারণা বা অনুভবকে বাস্তবায়ন করতে এগিয়ে আসে। তারই পথ বেয়ে বিশ্বে হাজির হয়েছে কনভারজেন্স নামের নতুন তত্ত্ব। এর সাহায্যে একটি কমপিউটার, একটি ল্যাপটপ, এমনকি একটি স্মার্ট মোবাইল ফোনও একযোগে তথ্যপ্রবাহ ও ছবি বিনিময়ের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। কনভারজেন্স সময় ও খরচ কমিয়ে ব্যবস্থাপনাকে করছে সহজ, কার্যকর ও গতিশীল। কনভারজেন্স টেলিযোগাযোগের সর্বশেষ রূপ। কনভারজেন্সের কল্যাণে শব্দ, তথ্য ও ছবি সঞ্চালনের একটি একক মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে ডাটা নেটওয়ার্কের আওতায় গুণগত মানসম্পন্ন ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল তথা ভিওআইপির সমন্বয় ঘটিয়ে খরচ কমানো সম্ভব হচ্ছে এবং ব্যবস্থাপনাকে সহজতর করছে। এতে ডেডিকেটেড সার্ভারের বিকল্প হিসেবে ভার্চুয়াল কমপিউটিং জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশেও দ্রুত অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। অফিস কালচারে সংযোজিত হচ্ছে উন্নততর টেলিযোগাযোগপ্রযুক্তি। এগুলোর মাঝে কনভারজেন্স হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার না করলে যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের পক্ষে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। আগেই বলা হয়েছে, নতুন কনভারজেন্স প্রযুক্তি উৎপাদন খরচ ও সময় কমাতে এবং ব্যবস্থাপনাকে সহজতর ও গতিশীল করতে সহায়ক হবে। ফলে এ প্রযুক্তির সহায়তায় জনগণ এখন স্থান ও কালের উর্ধ্বে উঠে একযোগে একই লক্ষ্যে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত একটি কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপিত একই টেলিফোন নাম্বার ব্যবহার করে ভারত বা চীনে অবস্থিত তাদের আরঅ্যান্ডডি হাউজগুলোর সাথে এমনভাবে যোগাযোগ রাখছে, যেন তারা একই ছাদের নিচে কাজ করছে এবং তাদের মধ্যে কোনো ভৌগোলিক দূরত্ব নেই। বিভিন্ন টেলি যন্ত্রপাতি ও ভিডিওর সমন্বয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা এমন স্তরে উন্নীত হওয়ার ফলেই এটা সম্ভব হচ্ছে। কনভারজেন্স পদ্ধতি সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হলে আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সূচিত হবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের যেকোনো কমপিউটার, মোবাইল ফোন, যেকোনো ল্যাপটপ বা ল্যান্ডফোন হয়ে উঠবে একটি শক্তিশালী যোগাযোগ মাধ্যম। একটি ফোন কল ডেস্কটপে গ্রহণ করে তা সেলফোনে রূপান্তর করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া যাবে, কথা বলার সাথে সাথে অপর প্রান্তের ছবি বা অন্যান্য দৃশ্যও দেখা সম্ভব হবে।
একটু ভাবুন
অফিসে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হঠাৎ বাসা থেকে ফোন এলো। বিরক্তি নিয়ে আপনি স্ত্রীর সাথে কথা বললেন। কথা সংক্ষেপ করতে বললেন। অফিসের সব কাজ সূচারুরূপে সম্পন্ন করে রাত ১১টায় বাসায় এসে অনুধাবন করলেন দিনটি ছিল আপনার স্ত্রীর জন্মদিন, কিন্তু কাজের চাপে ভুলে গেছেন। গল্পের পরের অংশটুকু অনুমেয়। প্রবল ক্লামিত্মকর, সাফল্যময় দিনটি পরিণত হলো বিভীষিকাময় রাতে।
দোষটি কি আপনার? ভুলে গেছেন? কত তথ্য মনে রাখবেন? মনে যদি রাখেনও সঠিক সময়ে মনে পড়বে, তার নিশ্চয়তা কোথায়? আমরা টেলিফোনে যে কথা বলি, তার কতটার তথ্যবহুল অংশ কার্যকর হয়? তথ্য ও টেলিযোগাযোগের মধ্যে সঠিক সমন্বয় কি সম্ভব? কথার সাথে চেহারা, চেহারার সাথে তথ্য, তথ্যের সাথে কথা-পরিপূর্ণ সমন্বয় কি সম্ভব?
এসব কিছুর উত্তর পাওয়া যাবে কনভারজেন্স নামের নতুন তত্ত্বের ওপর। একটিমাত্র নেটওয়ার্ক এবং একটিমাত্র ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে আপনি পেতে পারেন কনভারজেন্সের সব আশীর্বাদ। নিউ জেনারেশন নেটওয়ার্ক তথা এনজিএন-এর মাধ্যমে আমরা পেতে পারি কনভারজেন্সের নতুন নতুন সার্ভিস।
মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ অথবা ফোনসেটটির মধ্যে যেকোনোটিই হতে পারে আপনার যোগাযোগের মাধ্যম। নতুন প্রজন্মের মোবাইল ফোনগুলোর সাথে ল্যাপটপের ব্যবধান দিনে দিনে কমে আসছে। ফোন সেটগুলোর সাথে ফোন কল ছাড়াও যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সার্ভিস- ইমেইল সার্ভিস, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, এফএম রেডিও, ক্যামেরা ইত্যাদি। আবার ল্যাপটপের সাথে যুক্ত হচ্ছে কথা বলা বা ভিডিও দেখার বিভিন্ন যোগাযোগের সেবাসমূহ।
কনভারজেন্স টেকনোলজি
কনভারজেন্স টেকনোলজি স্বাস্থ্য ও কৃষির মতো ক্ষেত্রগুলোকে দিতে পারে ভিন্ন মাত্রা। একজন গ্রামবাসী গ্রামে বসেই পেতে পারেন স্বাস্থ্য এবং কৃষির গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিসসমূহ। কর্পোরেটসমূহ তাদের ম্যানেজমেন্টকে করতে পারে গতিময়। শিক্ষাব্যবস্থায় কনভারজেন্স নিয়ে আসতে পারে ব্যাপক প্রগতি। সামগ্রিকভাবে শহর ও গ্রামের মধ্যে যে ব্যাপক ফারাক রয়েছে কনভারজেন্স টেকনোলজির যথাযথ প্রয়োগ এই সমস্যার একটি সঠিক সমাধান দিতে পারে। গভর্নমেন্ট অব গভর্নমেন্ট, গভর্নমেন্ট অব পিপল সবক্ষেত্রেই কনভারজেন্সের ভিন্ন সেবাসমূহ গভর্নমেন্ট সার্ভিসকে করতে পারে সুনিশ্চিত সেবাধর্মী এবং লাভজনক।
কনভারজেন্সের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের ওপর। টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরসহ কোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসই কি কনভারজেন্স নেটওয়ার্ক থেকে বাদ যাবে। সব ধরনের সার্ভিস থাকবে সংযুক্ত। টেলিভিশনের টাচস্ক্রিন চেপেই আপনি প্রিয় ক্লোজ-আপ-ওয়ান তারকাকে ভোট দিতে পারবেন। কনভারজেন্সের হাত ধরে গতানুগতিক টেলিভিশন ব্রডকাস্টিংয়ের বাইরে এসে কমিউনিকেশন এবং ইন্টারেক্টিভ ইনফরমেশন শেয়ারিংয়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। বিভিন্ন ধরনের মানুষকে বিভিন্ন রকমের ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমে সংযুক্ত রাখা এবং একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কের ব্যাপকতা নিয়ে আসছে কনভারজেন্স।
ভনএয়ার
২০০৪ সালে আমেরিকার কিছু সেরা টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্বরা ভনএয়ার তৈরি করেন। উদ্দেশ্য ছিল পরবর্তী জেনারেশনের টেলিকমিউনিকেশনের ওপর গবেষণা করা এবং সৃষ্টিশীল ব্যবসায়-সফল পণ্য তৈরি করা। উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশী তথা এনআরবি হওয়ায় ভনএয়ার-এর উন্নয়ন ও গবেষণা তথা ‘আর অ্যান্ড ডি’ অফিসটি বাংলাদেশে স্থাপিত হয়। কাজের জটিলতা ও চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করে ভনএয়ার শুরু থেকেই বাংলাদেশের সেরা মেধাবীদের নিয়ে দল গঠন করেছে। সময়ের সাথে সাথে এসেছে পূর্ণতা এবং টিম স্পিরিট। বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে বিশবমানের একটি সংগঠন। উদ্ভাবন করার সক্ষমতা, সুযোগ্য ম্যানেজমেন্ট এবং কর্পোরেট প্রসেস ভনএয়ারকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বিশ্বমানের পণ্য তৈরি করার আদর্শ কোম্পানি হিসেবে। বিগত তিন বছর ধরে বাংলাদেশী প্রকৌশলীরা দক্ষতার সাথে বিভিন্ন দেশের সেরা সেরা টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডারদের কনভারজেন্সভিত্তিক উদ্ভাবনামূলক সার্ভিসসমূহ দিয়ে আসছেন। বিশ্বমানের এই কাস্টমারদের সাথে কাজ করার মাধ্যমে প্রোডাক্টগুলো যেমন গুণগত মাত্রা পেয়েছে, তেমনি ভনএয়ারও হয়ে উঠেছে একটি বিশ্বমানের উদ্ভাবনামূলক হাউজ রূপে।
ভনএয়ার বাংলাদেশ মার্কেটের কথা সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করে প্রযুক্তিভিত্তিক কয়েকটি কনভারজেন্স এনেছে। নিচে সলিউশনগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো :
ইকো : ছোট, মাঝারি ও বড় যেকোনো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় এই echo সলিউশন তথ্যভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের চমকপ্রদ এবং সৃজনশীল যোগাযোগ বৈশিষ্ট্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ভিডিও ফোন কনফারেন্স, মাল্টিমিডিয়া মেসেজিং ইত্যাদি খুবই প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য দিয়ে সাজানো হয়েছে এ সলিউশন।
গ্রিনপ্যাকস : এই greenpacks সলিউশন মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশনের জন্য একটি আইপি টেলিফোনি প্লাটফরম। নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডারদের জন্য এই সলিউশন তৈরি করা হয়েছে। নানা ধরনের নতুন নতুন সার্ভিস এই সলিউশনের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডাররা জনগণকে উপহার দিতে পারবেন।
ইকো টু ইউনিফাই : সিটিজেন এবং গভর্নমেন্টের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর, তথ্যভিত্তিক এবং গতিশীল করার জন্য এই echo2unify তৈরি করা হয়েছে।
কেয়ার ফোর পিপল : স্বাস্থ্যসেবা খাতের বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করে care4people সলিউশনের মাধ্যমে সমস্যাগুলোর কনভারজেন্সভিত্তিক সলিউশন চিন্তা করা হয়েছে। মূলত যেসব সরকারি ও এনজিও প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যসেবা যোগায় তাদের জন্য এই সলিউশন তৈরি করা হয়েছে।
পালস : কাস্টমার অথবা কলসেন্টার ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠানের জন্য এই pulse সলিউশন তৈরি করা হয়েছে। কমপিউটার টেলিফোনে ইন্ট্রেগেশন, অটোমেটেড কলরাউটিং ইত্যাদি ফিচারসমূহ দিয়ে সাজানো হয়েছে এই সলিউশন।
ব্লেইজ : blaze হচ্ছে সরাসরি কোনো একটি মুহূর্ত সহজে প্রাপ্য অবকাঠামোর মধ্য দিয়ে উপভোগ করার মতো একটি সলিউশন।
গত তিন বছর ধরে ভনএয়ার বিশ্বমানের টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিস প্রোভাইডারদের নতুন নতুন সার্ভিস দিয়ে আসছে।
প্রযুক্তির ক্রমবিকাশ : টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট
বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারগুলো মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার যে ক্রমবিকাশ আমরা দেখতে পাই, তা মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। আবার বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে মানুষের জীবনযাত্রা, ব্যবসায়-বাণিজ্য সবকিছুই যেন খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। এর ফলে এই বহুমাত্রিক জীবনে বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ মাধ্যম আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ আজ থেকে এক যুগ আগেও এই প্রভাব ছিল মানুষের ধারণার বাইরে।
অপরদিকে আধুনিক যুগের অপর একটি অবদান হচ্ছে ইন্টারনেটপ্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির আবির্ভাবের ফলে আমাদের জীবনযাত্রায় যুগান্তকারী পরিবর্তন দেখা যায়। ইন্টারনেটপ্রযুক্তি মানুষের জীবনের সাথে জালের মতো জড়িয়ে গেছে। আর প্রতিনিয়ত ইন্টারনেটকে মানুষের হাতের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য বিভিন্ন দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কোম্পানি, যাদেরকে বলা হয় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি।
কিন্তু কিছুদিন আগেও টেলিযোগাযোগ এবং ইন্টারনেট বা নেটওয়ার্কপ্রযুক্তি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। দুটি প্রযুক্তিরই কিন্তু মূল উদ্দেশ্য মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত, আরও সহজলভ্য, আরও বিস্তৃত করা। প্রকৌশলীরা পর্যন্ত এই দুটি প্রযুক্তিকে সম্পূর্ণ আলাদা paradigm-এ চিন্তা করতেন এবং বাস্তবায়িত করতেন। কিন্তু দুটি প্রধান কারণে বর্তমানে কনভারজেন্স নামের আরও একটি নতুন তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যাকে বলা যায় টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেটপ্রযুক্তির সম্মিলন বা একত্রিতকরণ। প্রথম কারণটি বলা যায়, বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ফলে আজ প্রায় সব এনালগ সিস্টেমই ডিজিটালে পরিবর্তিত হয়েছে। আমাদের কথা, গল্প, গান, ছবি স্থির বা চলমান- যাই বলি না কেন, সবকিছুই প্রায় আজ ডিজিটাল। এর ফলে এই ডিজিটাল কনটেন্টকে খুব সহজেই বহুমাত্রিকভাবে চিন্তা করা যাচ্ছে এবং বিভিন্নভাবে সেবাদানকারী সার্ভিসগুলোর সাথে পরিবর্ধন, পরিমার্জন ও সমন্বয় করা যাচ্ছে। কনভারজেন্স তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দ্বিতীয় কারণটি হলো- মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা। দিনে দিনে মানুষের জীবনধারণের চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে মানুষ ক্রমশ ব্যস্ত থেকে ব্যস্ততর হচ্ছে। ফলে মানুষ খুব সহজে ও তাড়াতাড়ি অনেক কিছু জানতে চায়। একজন গ্রাহক বাসায় বসে ফোন করেই জানতে চায় তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্য, ঘরে বসেই আজ মানুষ কেনাকাটা করতে চায়, দিতে চায় বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানির বিলের মতো বিভিন্ন সেবা। মানুষের এই পরিবর্তিত জীবনযাত্রার কথা চিন্তা করে প্রকৌশলী থেকে হয় সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান- সবাই ভাবতে শুরু করে কিভাবে মানুষের মধ্যে ভাববিনিময় আর তথ্যবিনিময় এই দুটির মধ্যে সমন্বয় করে আরও উন্নত সার্ভিস দেয়া যায়। আর এই চিন্তা থেকেই উঠে এসেছে নতুন তত্ত্ব কনভারজেন্স।
ইতিহাস
কনভারজেন্স মূলত একটি তত্ত্ব। এটি বিজ্ঞানের কোনো মৌলিক শাখা নয়। এই তত্ত্বটির মূল কথা হলো টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেটপ্রযুক্তির বিভিন্ন পর্যায়ের সার্ভিসগুলোকে একত্রিত করে সহজ উপায়ে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো। টেলিযোগাযোগের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় টেলিযোগাযোগের বিভিন্ন সুবিধাগুলো এর টেকনিক্যাল নেটওয়ার্কের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। এর ফলে একই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে টেলিযোগাযোগের নতুন নতুন সার্ভিস দেয়া খুব সহজসাধ্য ছিল না। টেলিকমিউনিকেশন কনভারজেন্স ধারণাটি চালু করে ১৯২৮ সালে AT&T কোম্পানি এবং একবিংশ শতাব্দীতে এসে সেই তত্ত্বটি পূর্ণতা পায়। কোম্পানিটি মূলত ক্রমবর্ধমান বাজারে টেলিকম কোম্পানি হিসেবে নিজেদের প্রাধান্য বিস্তারের জন্য কনভারজেন্স তত্ত্বটিকে পরিবর্তন করতে থাকে। তখন পর্যন্ত টেলিকমিউনিকেশন মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং ব্রডকাস্টিং মিডিয়া বাণিজ্যিকভাবে সম্পূর্ণ আলাদা সার্ভিস ছিল। ১৯৬০ সালে কনভারজেন্স শুরু হয় মূলত নেটওয়ার্কের ট্রান্সপোর্ট লেভেলে, কিন্তু গ্রাহক লেভেলে তখনও এর প্রভাব লক্ষ করা যায়নি। ফলে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ফিক্সড ফোন কোম্পানি এবং মোবাইল অপারেটররা আলাদা আলাদা কোম্পানি ছিল। কিন্তু বিগত শতাব্দীর নববইয়ের দশকের পর থেকে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেতে থাকে, যা বড় বড় ফোন কোম্পানিকে ভাবিয়ে তুলে। এরপর দেখা যায় ফোন কোম্পানিগুলোও টেলিফোন কলের পাশাপাশি ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করে। বাজার সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতায় যখন ফিক্সড ফোন কোম্পানিগুলো মোবাইল টেলিফোন সার্ভিস ও ইন্টারনেট সার্ভিস দেয়া শুরু করে, তখন থেকেই কনভারজেন্স তত্ত্বটি মার্কেটে স্থায়ী রূপ লাভ করে। ইন্টারনেটপ্রযুক্তির মূল প্রটোকল আইপি এই সীমাবদ্ধতা দূর করতে সমর্থ হয়েছে। আইপি প্রটোকলের উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন, বিভিন্ন রকম সার্ভিস, যেমন : তথ্য, ছবি, অডিও এবং ভিডিও সার্ভিসকে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর জন্য নির্দিষ্ট টাইপের নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীলতা দূর করেছে। ফলে যেকোনো সার্ভিস যেকোনো নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গ্রাহককে সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। যেমন- আপনার হাতের মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করে আপনি কথা বলার পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন, এসএমএস পাঠাতে পারছেন। আবার এফএম রেডিও শুনতে পারছেন। তার মানে কথার সাথে এসএমএস, ইন্টারনেট এবং রেডিও সার্ভিস আপনি পাচ্ছেন আপনার মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। আবার আপনার ল্যাপটপের মাধ্যমেও এই সফল সার্ভিস পাচ্ছেন ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। এইভাবে ইন্টারনেটপ্রযুক্তি যোগাযোগের সব মাধ্যমকে একত্রিত করে গ্রাহকের কমপিউটারের পর্দায় বা ছোট মোবাইল ফোনে হাজির করছে। ফলে ভিওআইপি সার্ভিস খুব দ্রুত প্রসার লাভ করেছে। বর্তমানে কনভারজেন্সের মূল ধারাটি আবর্তিত হচ্ছে ভিওআইপি সার্ভিসকে কেন্দ্র করে।
কনভারজেন্স : সম্ভাব্য প্রয়োগ
প্রাত্যহিক জীবন মানুষের যোগাযোগের ভাষা হয় ‘কথা’ অথবা ‘ছবি’ অথবা কখনো কখনো একসাথে উভয়ই। আবার তথ্য হলো প্রকৃত অবস্থা বা পরিস্থিতি বুঝাবার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। এসব কারণেই যখন কোনো ব্যক্তি কাউকে কোনো বিষয় বুঝাতে চায়, তখন সে সশরীরে উপস্থিত হয়ে কথা বলে, তার জানা এবং একত্রিত করা তথ্য দিয়ে বুঝায়। শুধু ফোনে কথা বলে বা ভিডিও বা ছবি পাঠিয়ে অথবা শুধু মেইল বা চিঠি পাঠিয়ে এই প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয় না। আসলে ফোনে কথা বা ভিডিও অথবা মেইল/চিঠি কোনোটাই এককভাবে পরিপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে না। এক্ষেত্রে কনভারজেন্স যে সুবিধাটা নিয়ে আসছে তা হলো কথা বলা (ভয়েস), সরাসরি দেখা (ভিডিও) এবং তথ্য (ডাটা) আদান-প্রদান করার সুবিধা একই সময়ে, একই সাথে, একই ডিভাইস (ফোন বা কমপিউটার) থেকে নেয়ার সুযোগ। প্রয়োজনমতো কনভারজেন্সের এই সুবিধা ব্যবহার করে যেকেউ তার প্রাত্যহিক নানা প্রয়োজনীয়তা মেটাতে পারবে, যা কিনা সে একটিমাত্র টেলিযোগাযোগ সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে পারবে মাত্র একটি তারের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে ভোক্তারা কোনোরকম বাধা ছাড়াই এক সাথে কথা বলা, সরাসরি দেখা এবং তথ্য বিনিময়ের সুবিধা নিতে পারবে স্বল্পমূল্যে, যেখানে সব সুবিধার মানের নিশ্চয়তাও বজায় থাকবে।
কনভারজেন্সের আরেকটি বড় অবদান হলো আমাদের পরিচিত পিএসটিএন টেলিফোন ব্যবস্থা, বহুল ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ব্যবস্থা আর নতুন যুগের আইপি ফোন ব্যবস্থার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন। এসব ব্যবস্থাকে একীভূত করে আজকের দিনের সব ধরনের টেলিফোন গ্রাহকদের সহজে নানা ধরনের নতুন নতুন সুবিধা নিতে সহায়তা করবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এই একীভূত করার ফলে একজন গ্রাহক তার মোবাইলে কথা বলতে বলতে তার অফিসে পৌঁছালেন, সেই মোবাইলের কলটা না কেটে তার অফিসের ডেস্কের ফোনটাতে ট্রান্সফার করে নিতে পারবেন এবং তার প্রয়োজনীয় ফোনালাপ চালিয়ে যেতে পারবেন।
আমাদের স্বাস্থ্যসেবা খাতের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা শুধু শহরের কিছু নামকরা হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতেই পাওয়া যায়। যেহেতু কনভারজেন্স একই সাথে কথা বলা, সরাসরি দেখা এবং তথ্য বিনিময়ের সুবিধা দেয়, যেকোনো জায়গা থেকে এ সুবিধার মাধ্যমে দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞ ডাক্তারদের সেবা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। এভাবে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে, দেশে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার পরিধি অনেক প্রসারিত করা যাবে। রোগীরা শহর বা গ্রাম যেকোনো অবস্থান থেকে ডাক্তারকে ফোন করে কথা বলতে পারবেন, একই সাথে সরাসরি ভিডিওর মাধ্যমে তাদের সমস্যা ডাক্তারের কাছে উপস্থাপন করতে পারবেন এবং নানা রোগ সম্পর্কিত পরীক্ষার তথ্য একইসাথে বিনিময় করতে পারবেন। এমনকি, ডাক্তাররা যেকোনো রোগীর ফোন পাওয়ার সাথে সাথে তার নিজস্ব ব্যবস্থায় রাখা রোগীর রোগ সম্পর্কিত নানা তথ্য দেখতে পারেন। এসব সুবিধা ডাক্তারদের সময় বাঁচাবে, একই সাথে অনেক বেশি রোগীকে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার সুযোগ করে দেবে।
কনভারজেন্সের সুবিধা পেতে পারেন পরিবারের সবাই, বিশেষ করে যখন পরিবারের কেউ থাকেন দূরে, এমনকি দেশের বাইরে। এই সুবিধার মাধ্যমে পরিবারের সবাই দূরে থাকা কাছের মানুষের সাথে কথা বলতে পারবেন, তাকে সরাসরি দেখতে পারবেন, সেই সাথে প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন- সার্টিফিকেটের স্ক্যান করা কপি ইত্যাদি আদানপ্রদান করতে পারবেন, এমনকি যদি আলাপের মাঝে প্রয়োজন হয়, তখনও।
করপোরেট জগতে কনভারজেন্সের সুবিধা করপোরেটের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে আনতে পারে আমূল পরিবর্তন, যা করপোরেটকে দিতে পারে নতুন মাত্রা। উদাহরণস্বরূপ, একই সাথে কথা বলা, দেখা এবং তথ্য লেনদেনের সুবিধা, করপোরেটের ক্লায়েন্টদের সাথে তাদের কথোপকথনকে অনেক বেশি সফল করতে পারে, আর সময়মতো সঠিক তথ্য তাদের সিদ্ধান্তগুলোকে নির্ভুল করতে সহায়তা করতে পারে। সচরাচর দেখা যায়, একজন ব্যস্ত ব্যবসায়ী বা কর্মকর্তা তার কাজের প্রয়োজনে দুটি মোবাইল, দুটি ফিক্সড ফোন ব্যবহার করেন, তার জন্য কনভারজেন্স দিতে পারে শুধু একটি নাম্বার ব্যবহারের সুবিধা। এই একটি নাম্বারে কোনো ফোন কল আসলে কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে, কখন ফোন বাজবে, কখন ফোন না বেজে ভয়েস মেইলে চলে যাবে, সবই এই নাম্বার ব্যবহারকারী নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
এমনকি তিনি চাইলে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, তার একটি নাম্বারে কল আসলে, তার মোবাইল, অফিসের তার পিএসটিএন ফোন এবং বাসার পিএসটিএন ফোন একইসাথে বেজে উঠবে, তিনি যেকোনো জায়গা থেকে কলটা রিসিভ করলে অন্য সব ফোন বাজা বন্ধ হয়ে যাবে। এসব সুবিধার সাথে তিনি সাধারণ পরিচালনার যে সব কাজ করেন, যেমন মিটিং করা, তাও তিনি করতে পারবেন যেকোনো সময়ে তার দূরবর্তী সহকর্মী বা ক্লায়েন্টের সাথে এবং এই মিটিংয়ে যেকেউ, যেকোনো টেলিফোন সিস্টেম (মোবাইল, পিএসটিএন বা আইপি ফোন) থেকে যোগ দিতে পারবেন।
উপরে উল্লিখিত কনভারজেন্সের সম্ভাব্য প্রয়োগসমূহ কনভারজেন্সের অসংখ্য সুবিধার সামান্য কিছু উদাহরণ। কনভারজেন্সের অপার সম্ভাবনার পরিধিতে যুক্ত হতে যাচ্ছে মিউজিক, গেম, আইপি ফোন, টিভি ব্রডকাস্টিংসহ আরো অনেক কিছু- যা হয়তো নিকট ভবিষ্যতে আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়াবে। এই মুহূর্তে শুধু কনভারজেন্সের প্রাথমিক সুবিধাগুলো প্রয়োগ হতে পারে সমাজের বিভিন্ন স্তরে, যা আমাদের টেলিযোগাযোগের জগতকে নতুন মাত্রা দিতে পারে।
কনভারজেন্স : সুবিধা ও অসুবিধা
কনভারজেন্সপ্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী খুব দ্রুত প্রসার লাভ করছে। এর প্রধান কারণগুলো নিম্নরূপ :
প্রথমত, তুলনামূলকভাবে কম খরচে অধিক সার্ভিস পাওয়ার প্রত্যাশা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রাহকদের কনভারজেন্সের বিভিন্ন প্রযুক্তি গ্রহণ করার মূল কারণ হলো তারা অল্প খরচে তথ্য ও ভাব বিনিময়ের যে চাহিদা সেটি পূরণ করতে পারছে। দ্বিতীয়ত, এ প্রযুক্তি যুগোপযোগী ও ক্রমবর্ধমান জীবনধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নিত্যনতুন সার্ভিস দিচ্ছে, যা পুরনো প্রযুক্তির টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পূরণ করতে সমর্থ নয়। তৃতীয়ত, এই প্রযুক্তিতে যেকোনো সার্ভিস পেতে গ্রাহকদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে না। কনভারজেন্সের যেকোনো প্রযুক্তিতে যেকোনো সার্ভিস তাৎক্ষণিক বা খুব অল্প সময়ের মধ্যে পেতে পারছে। চতুর্থ কারণটি কারিগরি। এ প্রযুক্তিতে যেকোনো সার্ভিস সংযোজন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করা এবং সেই সাথে রক্ষণাবেক্ষণ করা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজতর। ফলে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো খুব সহজেই এই প্রযুক্তি রপ্ত করতে পারছে।
সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- এর ফলে যেকোনো গ্রাহক ডাটা, ভয়েস, ভিডিও সম্পর্কিত যাবতীয় সার্ভিস একইসাথে পেতে পারে। ফলে যাবতীয় প্রয়োজন একটি ডিভাইস, যেমন- ল্যাপটপ বা একটি মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে পাওয়া যায় বলে গ্রাহকরাই অধিকতর আকৃষ্ট হচ্ছে।
কনভারজেন্স প্রবর্তনের কিছু কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে :
০১. বর্তমানে টেলিযোগাযোগের যে অবকাঠামো আছে, তা একদিনে তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিন অসংখ্য মানুষের সময়, শ্রম এবং প্রচেষ্টার ফলে তৈরি হয়েছে এ অবকাঠামো। এর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও কর্মীদের রয়েছে অনেক দিনের অভিজ্ঞতা। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে মানুষের স্বাভাবিক অনীহা এবং বিনিয়োগ করা পুঁজির সাহায্যে গড়ে ওঠা অবকাঠামো বাদ দিয়ে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের আর্থিক ক্ষতি- কোনো কোনো ক্ষেত্রে কনভারজেন্সের সম্প্রসারণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
০২. কনভারজেন্স প্লাটফরমের মূল অবস্থানে আছে ভিওআইপিপ্রযুক্তি। কিন্তু ভিওআইপি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী ও সফল কেস স্টাডি খুব বেশি দাঁড়ানি। ফলে অনেক ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারী এই নতুন প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসায় খুব বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয়। তারা বরং ‘ধীরে চলো’ নীতিতে আগ্রহী।
০৩. কনভারজেন্স যেহেতু আইটি এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার একীভূত করার প্রক্রিয়া, এই দুটি প্লাটফরমের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টিভঙ্গির বিশাল ফারাক লক্ষ করা যায়। আইটি পেশাজীবীরা সবকিছু তথ্য এবং তথ্যের প্রবাহ হিসেবে দেখতে চান, যা টেলিযোগাযোগ পেশাজীবীরা এভাবে দেখতে রাজি নন। এই দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য কনভারজেন্স সম্প্রসারণের গতি স্লথ করে দেয়।
কনভারজেন্স পরিসংখ্যান
টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় কনভারজেন্স মূলত শুরু হয়েছে ভিওআইপি প্রযুক্তিনির্ভর আইপি টেলিফোনি প্রচলনের মধ্য দিয়ে এবং ২০০৩ সাল থেকে খুব দ্রুত প্রসার লাভ করেছে, বিশেষত কর্পোরেট বাজারে। Frost & Sullivan-এর রিপোর্ট অনুযায়ী আগামী ১০ বছরের মধ্যে ৯০ শতাংশ এন্টারপ্রাইজ যাদের বিভিন্ন স্থানে অফিস, কারখানা অবস্থিত যোগাযোগের জন্য এনজিএন-এর আওতায় আসবে। এনজিএন মূলত কনভার্জড নেটওয়ার্ক এবং এর ফলে ১৬.৫ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়ের ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। অপর একটি রিপোর্ট থেকে পাওয়া যায়, এশিয়ার বাজারে আগামী ২০১১ সালের মধ্যে ১৬ মিলিয়ন আইপি ফোনের বাজার সৃষ্টি হবে।
আইবিএম পরিচালিত একটি জরিপের ফলাফল চার্ট আকারে নিচে তুলে ধরা হলো। আমরা বিভিন্ন ধরনের কনভারজেন্সের কথা উল্লেখ করেছি। যেমন- ভয়েস ও ডাটা কনভারজেন্স, ফিক্সড ও মোবাইল কনভারজেন্স, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস কনভারজেন্স ইত্যাদি। জরিপটি ছিল, পরবর্তী তিন বছরের কোনো ধরনের কনভারজেন্স খুব দ্রুত প্রসার লাভ করবে? চার্ট থেকে দেখতে পাই বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত প্রসার পাচ্ছে ভয়েস ও ডাটা কনভারজেন্স ৮৮ শতাংশ এবং তারপরই আছে ফিক্সড ও মোবাইল কনভারজেন্স এবং সবচেয় কম ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস কনভারজেন্স।
আমাদের দেশে ২০০৮ সালে মাত্র আইপি টেলিফোনি লাইসেন্স দেয়া শুরু হয়েছে এবং একই বছরে অন্যান্য নেটওয়ার্ক (যেমন WiMax, 3G)-এর লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। সবকিছু পরিকল্পনামাফিক বাস্তবায়িত হলে ২০০৯ সালের মধ্যে আমাদের দেশের মানুষ কনভার্জড নেটওয়ার্কের বিভিন্ন আধুনিক ও উন্নত সেবা হাতের কাছে পাবে।
প্রেক্ষাপট : বাংলাদেশ
বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কনভারজেন্সের প্রচলন শুরু হয়েছে। তবে বাংলাদেশে কনভারজেন্সের প্রয়োগ শুরু হয়েছে বিভিন্ন মাত্রায়, বিভিন্ন আঙ্গিকে এবং বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক কোম্পানির মাধ্যমে। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় আছে মোবাইল কোম্পানিগুলো এবং সেই সাথে ফোন কোম্পানিগুলো আর ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এদেশে এখন পর্যন্ত ৬টি মোবাইল কোম্পানি চালু আছে। এদের মূল সার্ভিস ভয়েস হলেও সেটা আর এখন ভয়েসে সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় ৪ কোটি মোবাইল গ্রাহক আছেন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় খুব দ্রুত এই মার্কেট সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলও মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতার মধ্যে চলে এসেছে। ফলে আজ গ্রামের ধানক্ষেতে বসেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষ বিশ্বের সাথে যুক্ত হতে পারছে।
অপরদিকে ল্যান্ডফোন কোম্পানিগুলো যেমন-বিটিসিএল, র্যাং গসটেল ফোন কল সার্ভিসের পাশাপাশি গ্রাহকদের দ্রুতগতির ইন্টারনেট সার্ভিস দিচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হওয়ার পর ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ অনেক সহজলভ্য হয়ে গেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এর সুফল কারা পাবে, কিভাবে পাবে? বিশ্বের কয়েকটি বিষয়ের দিকে একটু দৃষ্টি দেয়া যাক-
প্রথমত, বিশ্বায়নের এ যুগে ইনফরমেশন ও টেলিকমিউনিকেশন কনভারজেন্স ভৌগোলিক দূরত্বকে কমিয়ে আনছে। এই বিষয়টি মানুষকে খুব সহজেই বিশ্বকে একটি গ্লোবাল ভিলেজ হিসেবে চিন্তা করতে সাহায্য করছে, যা আমাদের উন্নয়নশীল দেশের জন্য অর্থনৈতিক বিবেচনায় ইতিবাচক। এভাবে কনভারজেন্স বাংলাদেশের মতো দেশে যাদের ১৫ কোটি মানুষের বিশাল জনসম্পদ রয়েছে, নানাবিধ বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে আসবে। যেমন- কলসেন্টারসহ অন্যান্য বিপিও সার্ভিস। বাংলাদেশে বসেই একজন কর্মী বিশ্বের যেকোনো দেশের যেকোনো কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস, বিভিন্ন বিজনেস অপারেশন সার্ভিস, এমনকি কারিগরি সার্ভিস পর্যন্ত করতে পারবে কনভারজেন্সের কল্যাণে। আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারেও রয়েছে এর অনেক ইতিবাচক দিক।
যেকোনো সেবাধর্মী ব্যবসায়ক্ষেত্রে কনভারজেন্স নতুন মাত্রা যোগ করে ব্যবসায়ের নিত্যনতুন দুয়ার উন্মোচন করবে। ব্যাংক খাত, বেসরকারি সংস্থা, এনজিও ইত্যাদি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীর জন্য সেবার মানকে আরো অর্থবহ এবং তথ্যসমৃদ্ধ করবে। যাকে বলা হয় ইফেক্টিভ ইনফরম্যাটিভ কমিউনিকেশন, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানে কনভারজেন্স এক বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। তাৎক্ষণিক সেবার মানকে অনেক অনেক বেশি নির্ভুল ও অর্থপূর্ণ করে তুলবে। আমরা জানি দেশে ইতোমধ্যে কলসেন্টারের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এই কলসেন্টারগুলোর ভিত্তিই হবে কনভারজেন্স নামের ধারণাটি। তাছাড়া দেশে ই-গভর্নেন্স চালুর একটি মহৎপ্রচেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। বিদেশী সাহায্য সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অর্থের নিশ্চয়তা দিয়ে সরকারি নীতিনির্ধারণে ই-গভর্নেন্সের ধারণা প্রবর্তন করতে চাইছে। রাষ্ট্রকে সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে এবং জনগণকে তার সেবা গ্রহণকারী/সুবিধাভোগী বিবেচনা করলে কনভারজেন্সের ওপর ভিত্তি করে অনেক সমাধান দেয়া সম্ভব।
...........................................................................................
সাক্ষাৎকার
কনভারজেন্স স্বাস্থ্যসেবায় নতুন মাত্রা যোগ করবে
শেখ আবদুদ দাইয়ান
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, গ্রামীণ কল্যাণ
প্রশ্ন : স্বাস্থ্যসেবা বাংলাদেশের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। স্বাস্থ্যসেবায় আপনারা কি ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?
উত্তর : গ্রামীণ কল্যাণ গ্রামীণ পরিবারে অন্তর্ভুক্ত অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান, যা ১৯৯৬ সাল থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে কম খরচে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। বর্তমানে ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ ১২টি জেলার ৩৩টি উপজেলায় ১৫০টির বেশি ইউনিয়নে মোট ৩৯টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তুলে এই চিকিৎসাসেবা গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা, প্রতিরোধক ও কিছু প্রতিষেধকমূলক স্বাস্থ্যসেবা ক্ষুদ্র স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমে এই চিকিৎসাসেবা যোগাচ্ছে গ্রামীণ জনপদে। এ বছর ইতোমধ্যে নভেম্বর ’০৮ পর্যন্ত ২,৮৮,০৭৩ জন গ্রামীণ কল্যাণের চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন।
প্রশ্ন : উন্নততর স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা ও টেলিযোগাযোগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক হতে পারে বলে আপনি কি মনে করেন?
উত্তর : টেলিযোগাযোগ স্বাস্থ্যসেবা যোগাতে সরাসরি ভূমিকা রাখে না বলে মনে হলেও এর গতিকে ত্বরান্বিত করতে এর ভূমিকা অতুলনীয়। আমাদের কার্যক্রমে টেলিযোগাযোগ গৃহভিত্তিক স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রদানকারী স্বাস্থ্য সহকারী হতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অবস্থিত চিকিৎসক ও অন্যান্য মেডিক্যাল কর্মীসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছে, যা সেবাদানের গতিকে বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেস সার্ভিস পেতেও টেলিযোগাযোগপ্রযুক্তি বিশেষ ভূমিকা রাখছে। সর্বোপরি নিজ প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মাঠ পর্যায় সবসময় যোগাযোগ রক্ষা করে কার্যক্রমের গতিকে অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। এক কথায় টেলিযোগাযোগ ত্বরিত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে অবদান রাখছে।
প্রশ্ন : উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কনভারজেন্সপ্রযুক্তি কিভাবে অবদান রাখতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর : কনভারজেন্সপ্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আমার বিশ্বাস। এই প্রযুক্তি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেশী ও বিদেশী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য করা যাবে। উন্নত স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে কনভারজেন্সপ্রযুক্তি অবশ্যই অবদান রাখতে পারে। কনভারজেন্স হচ্ছে ই-হেল্থ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম পূর্বশর্ত। কনভারজেন্সপ্রযুক্তি নানাভাবে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা খাতে অবদান রাখতে পারে :
০১. গ্রাম পর্যায়ের একজন রোগীকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে পারা যাবে ভয়েস ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে।
০২. একজন রোগীর যাবতীয় তথ্য মুহূর্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে বিশ্বের যেকোনো ডাক্তারের কাছে।
০৩. প্রশাসনিক খরচ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
০৪. অল্প সময়ে প্রচুর কাজ করা যাবে ।
...........................................................................................
এ প্রযুক্তি উৎপাদন খরচ কমিয়ে নতুন শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করবে
আজিজ আহমেদ
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউটিসি অ্যাসোসিয়েট (ইউএসএ)
প্রশ্ন : টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘কনভারজেন্স’ প্রযুক্তির যে বৈপ্লবিক অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছে তাতে বাংলাদেশ কিভাবে উপকৃত হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর : কনভারজেন্সের কল্যাণে শব্দ ও তথ্য, তার ও বেতার প্রযুক্তি এমনকি ক্লাউড ও ডেডিকেটেড কমপিউটিং একাত্ম হতে পারছে। উদাহরণ টেনে বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কথা বলা যেতে পারে। এগুলো তাদের বর্তমান ডাটা নেটওয়ার্কের আওতায় গুণগত মানসম্পন্ন ভিওআইপির সমন্বয় ঘটাতে প্রয়াসী হচ্ছে। একইভাবে বিপুল ব্যয় ব্যবস্থাপনার জটিলতা এড়িয়ে ডেডিকেটেড সার্ভারের বিকল্প হিসেবে ভার্চুয়াল কমপিউটিং জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ফলে কনভারজেন্স বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনা এনে দেবে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন : টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর : নতুন প্রযুক্তি সংযোজন তথা ব্যবহার যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় তার পক্ষে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। এই প্রযুক্তি উৎপাদন খরচ কমাতে এবং ব্যবসায়কে নতুন শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযোগী করে তুলবে। বিশ্ব এখন একই সমতলে অবস্থান করছে। জনগণ এখন স্থান, কাল, পাত্রের উর্ধ্বে উঠে একযোগে একই লক্ষ্যে কাজ করছে। ভারত এবং চীনে অবস্থিত আরঅ্যান্ডডি হাউসগুলোর কথা বিবেচনা করুন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত মূল কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপিত একই টেলিফোন নাম্বার ব্যবহার করে তাদের আরঅ্যান্ডডি হাউসগুলোর সাথে এমনভাবে যোগাযোগ রাখছে, যেনো তাদের মধ্যে আদৌ কোনো ভৌগোলিক দূরত্ব নেই। বিভিন্ন টেলি যন্ত্রপাতি ও ভিডিওর সমন্বয়ে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা এমন স্তরে উন্নীত হয়েছে যে, মনে হচ্ছে আমত্মঃমহাদেশীয় ভৌগোলিক দূরত্ব মুছে দিয়ে এরা একই ছাদের নিচে একযোগে কাজ করছে। এখানেই কনভারজেন্সের শক্তি নিহিত।
প্রশ্ন : একজন সফল প্রবাসী বাংলাদেশী হিসেবে অপার সম্ভাবনাময় টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনিয়োগ আকর্ষণে কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর : আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ভনএয়ার (vonair) নামের আরঅ্যান্ডডি হাউস স্থাপন করেছি। উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘কনভারজেন্স’ সহায়ক বিভিন্ন ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি ও সমাধান উদ্ভাবনে আমরা বিগত চার বছর ধরে কাজ করছি। আমাদের একটি প্রজেক্টের নাম ‘কমিউনিকেটর’। এটি অতি সহজে বহনযোগ্য মোবাইল এবং পিসিতে ব্যবহারযোগ্য একটি ফোন বা সফটফোন, যা ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক বড় বড় অপারেটর বা ক্যারিয়ার ব্যবহার করছে। আমি দৃঢ়ভাবে আশা পোষণ করছি, এ ব্যাপারে বাংলাদেশে আমরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করব, যাতে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ঋণ মডেল বিশ্বের নানা উন্নত দেশে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে অনেক নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং রয়েছে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী। দেশে মেধা বিকাশের উপযুক্ত ক্ষেত্র প্রস্ত্তত হলে চাকরির জন্য তাদের বিদেশে যাওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রে আমি অনেকের সাথে কথা বলেছি, যারা উপযুক্ত সুযোগসুবিধা পেলে দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী। আমার প্রতিষ্ঠান ‘ভনএয়ার’-এর মতো আরো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হলে দেশের মেধা দেশে ধরে রাখার একটি সেতুবন্ধন তৈরি হবে।
প্রশ্ন : আমরা মনে করছি যে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে দেশে ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণের প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম। কিভাবে এ অবস্থার উন্নতি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর : বাংলাদেশের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বাংলাদেশ ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে এক ও সংহতিমন্ডিত একটি জনগোষ্ঠীর দেশ। আকারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টেটের সমান। বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি। আমি মনে করি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হোক এটা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী সব বাংলাদেশীই একান্তভাবে কামনা করে। আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. ইউনূস তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বোচ্চ কৃতিত্বের সাথে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে তিনি দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেন। এখনো দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। আমরা দেশে বিশেষভাবে প্রযুক্তি ও ওষুধ শিল্পে তথা সঠিকভাবে অর্থনৈতিক জাগরণ প্রত্যক্ষ করছি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রচুর বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। নিজের দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন তথা সঠিকভাবে অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সম্মান এবং ভাব মর্যাদা উন্নত হোক, এ কামনা সব প্রবাসী বাংলাদেশীকেই তাড়িত করে। এজন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজতর করতে হবে। জ্ঞান ও প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় আরো স্বচ্ছতা আনতে হবে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, আমাদের দেশের রয়েছে ১৫ কোটি মানুষের একটি বিশাল বাজার, বিশাল জনগোষ্ঠী। এই জনবহুল দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করার জন্য দরকার বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করা। আর এই ক্ষেত্রে কনভারজেন্সের বিভিন্ন প্রযুক্তির রয়েছে অফুরন্ত সুযোগ এবং অপার সম্ভাবনা, যা কাজে লাগাতে পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব। এই কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে আইসিটি মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। কনভারজেন্সপ্রযুক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে ২০০৮ সালকে একটি অগ্রবর্তী বছর হিসেবে গণ্য করা যায়। বিভিন্ন ভিওআইপি নীতিমালা প্রণয়ন, আইসিএক্স (ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ) এবং আইজিডব্লিউ (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে) লাইন্সেস ইস্যু, কলসেন্টার নীতিমালা প্রণয়ন ও লাইসেন্স ইস্যু এবং সর্বশেষ ওয়াইমেক্সের লাইসেন্স ইস্যুর মাধ্যমে বাংলাদেশে কনভারজেন্সের বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ, ব্যবহার ও বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এবং প্রণীত নীতিমালার আলোকে বিভিন্ন বাস্তবমুখী প্রদক্ষেপের মাধ্যমে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন করা। তবে একথা অসত্য নয় যে, বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক এখনো যথেষ্ট সম্প্রসারিত নয়। আইপি টেলিফোন বলি বা কনভারজেন্স বলি, এসবের দ্রুত প্রসার ও বহুল ব্যবহারের জন্য নেটওয়ার্ক গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনীয় মাত্রায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা না গেলে এ প্রযুক্তির প্রসার ও ব্যবহার সীমিত পর্যায়েও সম্ভব হবেনা। আশার কথা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ ব্যাপারে অগ্রগতি সাধনে যথেষ্ট তৎপর ছিল। নতুন গণতান্ত্রিক সরকারের আমলেও একটি উল্লেখযোগ্য স্লোগান হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। ফলে নতুন সরকার এ প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এটা আশা করা যায়। ।
আরও জানতে ভিজিট করুন :
Links :
Links :
1) http://untweeter.wordpress.com/books/computer-books/programming/
2) http://freelancestory.blogspot.com/
3) http://www.indg.in/primary-education/teacherscorner/9b69bf9959cd9b79be-9a69c79939be-993-9979cd9b09b99a89c79b0-9aa9a69cd9a79a49bf9a49c7-9899a89cd9a89a4-9a49a59cd9af9aa9cd9b09af9c19959cd9a49bf9b0-9ac9cd9af9be9ac9b99be9b0
4) http://biggani.com/index.php?option=com_samsitemap&Itemid=157&view=map&sort=normal&desc=1&submit=reload
5) http://www.bn.bdeduarticle.com/?p=230
6) http://www.pchelplinebd.com/wap/index-wap2.php?p=16676
7) http://unmochon.net/node/786
*** THE WAY TO BE A PART OF DIGITAL BANGLADESH. THE WAY TO
BE A FREELANCER. OUTSOURCING FOR INDIVIDUAL. ***
click here - www.dolancer.com